ডোনাটের মাঝে ছিদ্র কেন রাখা হয় জানেন | Le Delicia

ডোনাটের মাঝে ছিদ্র কেন রাখা হয় জানেন?

ডোনাট বৃত্তান্ত

মিষ্টি খাবার বা ডেজার্ট রাজ্যের আরেক অধিপতি ডোনাট, বর্তমানে একটি প্রচলিত খাবারের নাম। আপনার আমার মতো বেশিরভাগ মানুষের পছন্দের তালিকায় বেশ ওপরের দিকে রয়েছে এটি। কিন্তু কখনো কি মনে হয়েছে, প্রায় ১০০ বছর পুরনো এই খাবারটার আকৃতি এমন কেন হলো? কেনই বা ডোনাটের মাঝখানে ছিদ্র রয়েছে? চলুন আজ এটা নিয়ে জানা যাক।

ময়দা, ইস্ট, ডিম দুধ ১/২ কাপ, গলানো মাখন দিয়ে খামির তৈরি করে ডুবো তেলে ভেজে বানানো হয় ডোনাট। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের টপিংস এবং ফ্লেভারস এতে ব্যবহার করা হয়, যেমন চিনি, চকলেট বা ম্যাপেল গ্লাসিং।

Doughnut নাকি Donut? ইংরেজীতে বানান যাই হোক না কেন উচ্চারণ কিন্তু ডোনাটই হবে। ইংলিশ ‘Donut’ বানানটি মূলত আমেরিকায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে উনিশ শতক থেকে।

ডোনাট মূলত একটি ডাচ খাবার, ১৮ শতকের আগে নেদারল্যান্ডে এর আবিষ্কার হয়। তবে তখন বর্তমান প্রচলিত রিং শেপ ছিল না, সেটার নাম ছিল Olycake (অলেকেক)। এখনো রিং শেপ ছাড়া ডোনাট হয় যাকে ‘বেগেল ডোনাট’ বা ‘ক্রিম ফিল্ড ডোনাট’ বলা হয়।

১৭ শতকের দিকে আমেরিকার ডাচ অভিবাসীরা তৈরি করেছিল এই “Olycake” যাকে ‘ডোনাটের দাদা’ বলা হয়। ইতিহাসে বিবৃতি মতে এর বিস্তার ঘটে আমেরিকায় ১৮ শতকের পরের সময়টাতে। ১৯ শতকের শুরুর দিকে ইংরেজি রান্নার বইয়ের ‘আমেরিকান খাদ্য’ অধ্যায়ে ডোনাটের উল্লেখ ছিল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত ডোনাট খুব বেশি পরিচিতি পায়নি। যুদ্ধের সময়ে ফ্রান্সে আমেরিকান সৈন্যদের বাড়ির খাবারের স্বাদ মনে করিয়ে দেয়ার জন্যে আর্মির নারী স্বেচ্ছাসেবকরা ‘ডোনাট লেসিস’ পরিবেশন করেছিল। যুদ্ধের পরে সৈন্যদের বাড়িতে গিয়ে এই ডোনাট খাওয়ার ইচ্ছা আরও প্রবল হয়।এভাবেই চাহিদার সাথে সাথে ডোনাট সমৃদ্ধ হতে শুরু করে। বিশ্বব্যাপী ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর ঘটনা সত্ত্বেও ডোনটের ইতিহাসে এগুলো ছিল উজ্জ্বল মুহূর্ত।

ডোনাটের মাঝে ছিদ্র কেন ?

বর্তমান সময়ে বেকারির শেফরা বিভিন্ন আকৃতির এবং গড়নের পেস্ট্রি তৈরি করতে পারেন। কিন্তু অতীতে বিষয়টা এত সোজা ছিল না। একটি ডোনাটের চারদিক সেদ্ধ হলেও মাঝখানের অংশটুকু কাঁচা রয়ে যেত। আবার মাঝখানের অংশটুকু সেদ্ধ করতে গেল চারদিকটা পুড়ে যেত। তাই এ বিড়ম্বনা এড়াতে মাঝখানে ছিদ্র করে ডোনাট তৈরি করতে শুরু করে বেকারিগুলো। আর ডোনাট পায় বর্তমান আকৃতি।

কে আবিস্কার করলো এই ছিদ্র?

ডোনাটের রান্নার এই বিড়ম্বনা দেখে এর সমাধান বের করে আমেরিকান জাহাজের ক্যাপ্টেন হ্যানসন গ্র্যাগরি (Hansen Gregory) । ১৮৪৭ সালে গ্র্যাগরি ডোনাট ভাজার আগে ময়দার বলের কেন্দ্রে একটি ছিদ্র করে। অনেক বিবরণে পাওয়া যায়, ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে নিউ ইংল্যান্ড জাহাজ ক্যাপ্টেন গ্র্যাগরির মা এলিজাবেথ গ্রেগোরি প্রথম ছিদ্রসহ ডোনাট তৈরি করেন। আরেকটি সংস্করণে দাবি করে যে ক্যাপ্টেন হ্যানসন গ্র্যাগরি জাহাজের চাকার অনুরূপ মিল রেখে ডোনাটে ছিদ্র তৈরি করেছিলেন। গ্রেগরিই সেই ব্যক্তি যিনি ক্লাসিক ‘The hole in the middle shape’ আবিষ্কারের কৃতিত্ব পেয়েছিলেন।

১৯২০ সালে, রাশিয়ান বংশোদ্ভূত অভিবাসী অ্যাডলফ লেভিট প্রথম অটোমেটেড ডোনাট মেশিন তৈরি করেছিলেন। ভবিষ্যতের অটোমেটেড ডোনাট তৈরির প্রক্রিয়াটি শিকাগোতে ১৯৩৪ সালের বিশ্ব মেলায় প্রদর্শিত হয়। মেলায় ডোনাটগুলো নিয়ে “The food hit of the Century Of Progress” হিসাবে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল এবং সেগুলি সারা দেশে সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয় হয়। ডোনাট তখন থেকেই আমেরিকানদের জন্য একটি প্রিয় ব্রেকফাস্ট এবং সহজ খাবার ।

জেনে অবাক হবেন:

  •  আমেরিকায় ডোনাটের এই অত্যধিক চাহিদার কারণে প্রতিবছর জুনের প্রথম শুক্রবারে ন্যাশনাল ‘ডোনাট ডে’ পালিত হয়। এমনকি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে স্যালভেশন আর্মির জন্য তৈরি “ডোনাট লেসিস” এর সম্মানে ১৯৮৮ সালে একদিন ছুটিও ধার্য করা হয়েছিলো।
  • প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডোনাট তৈরি হয়। আমেরিকার বিশাল ডোনাট শিল্পে অসংখ্য ফাস্ট ফুড চেইন এই ডোনাট উৎপাদনে কাজ করছে। কানাডায় ডোনাট উৎপাদন আমেরিকার চেয়ে কম হলেও তার পরিমাণ প্রতি বছর প্রায় ১ বিলিয়ন।
  • এন্টেনম্যানে প্রতি ঘন্টায় ১০০,০০০ ডোনাট মন্থন করা হয়, প্রতি সপ্তাহে ১৫ মিলিয়ন ডোনাট তৈরি হয় এবং প্রতি বছর ৭৮০ মিলিয়ন থেকে ৪ বিলিয়ন পর্যন্ত ডোনাট তৈরি করা হয়। এক বছরের উৎপাদিত সবগুলো ডোনাটকে একের পর এক সাজালে তা দিয়ে পৃথিবীকে প্রায় নয়বার চক্কর দেওয়া সম্ভব!

ডোনাট ছোট বড় সবার পছন্দের হলেও বাচ্চারা তো ডোনাট-প্রেমী! এতে প্রচুর পরিমাণে সুগার আর ক্যালোরি পাওয়া যায়। তাই এর চাহিদার শেষ হয় না!

ডোনাট সম্পর্কে এতকিছু জানার পর আপনার নিশ্চয়ই ডোনাট খেতে ইচ্ছে করছে? তাহলে আর দেরী কেন! ঝটপট অর্ডার করে ফেলুন ‘লা ডেলিশিয়া’র ডোনাট প্যাকেজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

`
  • No products in the cart.