কেকের সাথে চকলেট, না চকলেটের সাথে কেক? | Le Delicia

কেকের সাথে চকলেট, না চকলেটের সাথে কেক?

কেকের নাম শুনলে সবার আগে কোন কেকের নাম মাথায় আসে বলুন তো? চকলেট কেক তাই তো? একদম তাই। বাচ্চা থেকে বুড়ো কিংবা এশিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া চকলেট কেক পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কিন্তু দুষ্কর। বিশ্বের সব জনপ্রিয় কেকের তালিকায় প্রথম সারিতেই অবস্থান এই চকলেট কেকের। কিন্তু এই চকলেট কেক খেতে গিয়ে কি কখনো আপনার মনে হয়েছে যে এই কেক তৈরিতে চকলেট বেশি না কেক? অর্থাৎ কেকের মধ্যে চকলেট মেশানো হয় নাকি চকলেটের মধ্যে কেক? তো এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমরা না হয় একটু ইতিহাস দেখে আসি।

সূচনা

চকলেট কেকের ইতিহাস শুরু সেই ১৭৬৪ সালে যখন ড. জেমস বেকার প্রথমবারের মতো কোকোয়া বিন থেকে চকলেট তৈরি করেন। পরবর্তীতে ১৮২৮ সালে নেদারল্যান্ডসের কনরাড ভ্যান হটেন লিকুইড কোকোয়া থেকে মেকানিকাল পদ্ধতিতে ফ্যাট দূর করেন। এর ফলে তৈরি হয় কোকোয়া বাটার এবং কোকোয়া গুড়ো যা ‘রক কোকোয়া’ নামে পরিচিত। এই গুড়ো তৈরির ফলে চকলেট কেক তৈরির পথ অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। তবে প্রথম চকলেট কেক কোথায় এবং কে তৈরি করে তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। জানা যায় সর্বপ্রথম ফ্রান্সের এক কুক চকলেট কেক তৈরি করেছিলেন নেপোলিয়ন বেনাপোর্টের স্ত্রী জোসেফিনের জন্য। আবার অন্য গল্প বলে আমেরিকার সারাহ লি নামক এক মহিলা ১৮০০ সালে সর্বপ্রথম চকলেট কেক তৈরি করেন।

তবে প্রথম চকলেট রেসিপি প্রকাশিত হয় ১৮৪৭ সালে। একজন জনপ্রিয় রান্নার বইয়ের লেখিকা এলিজা লেসলি তার “The Lady’s Receipt Book” বইয়ে এই রেসিপি প্রকাশ করেন৷ সেই রেসিপিতে কেক তৈরিতে চকলেট কুচি ব্যবহার করার কথা উল্লেখ ছিলো। তবে বর্তমানে কোকোয়া পাউডার এবং গলানো চকলেট দিয়ে চকলেট কেক তৈরি করা হয়।

চকলেট কেকের যত বিবর্তন

১৮৯০ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত চকলেটের বেশিরভাগ রেসিপিই ছিল ড্রিংকসের। কেকের ফিলিংস এবং গ্লেজ আনার জন্য ও ব্যবহার করা হতো চকলেট। ১৮৮৬ সাল থেকে আমেরিকান কুকরা কেকের ব্যাটারে চকলেট মেশানো শুরু করে। ১৯৩০ সালে ডাফ কোম্পানি পিটসবার্গ ডেভিলস ফুড চকলেট কেক মিক্স বাজারে আনে তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য সেটি বেশি পরিচিতি পায়নি। পরবর্তীতে ডানক্যান হিনস “Three Star Special” কেক মিক্স বাজারে চালু করেন। এই মিক্সের বিশেষত্ব ছিল এটি দিয়ে একই সাথে চাইলে হোয়াইট কেক, চকলেট কেক অথবা ইয়েলো কেক তৈরি করা যেতো।

১৯৮০ সালে চকলেট ডিকেডেন্স নামক চকলেট কেক আমেরিকায় ভীষণ জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৯০ সালে মল্টেন চকলেট কেক জনপ্রিয় হয়। এই মল্টেন চকলেট কেকের কেন্দ্রে লিকুইড চকলেট থাকতো একইসাথে ব্যবহৃত হতো ইনফিউজড চকলেট। এই ইনফউশনে চকলেটের সাথে চা, কফি, কারি, লাল মরিচ, প্যাশন ফল, শ্যাম্পেন ইত্যাদি ফ্লেভার ব্যবহার করা হতো। ২০০০ সালে চকলেট লাউঞ্জ এবং আর্টিসানাল চকলেট মেকাররা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তবে বিশ শতকে কোকোয়ার দাম কমার আগে পর্যন্ত এই চকলেট কেক কেবল মাত্র বিশেষ দিনের জন্য রেয়ার ট্রিট হিসেবেই গণ্য করা হতো। বিশ শতকে কোকোয়ার দাম কমে এলে চকলেট কেক সব পর্যায়ের মানুষের কাছে ছড়িয়ে পরে।

চকলেট কেকের যত ধরন

চকলেট কেক তৈরিতে চকলেটের পাশাপাশি ফাজ, ভ্যানিলা ক্রিম সহ আরও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি জাতীয় উপাদান ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের চকলেট কেক ভীষণ জনপ্রিয়। চলুন জেনে নিই এমনি কিছু জনপ্রিয় চকলেট কেকের বিষয়ে।

স্যাচারটরট কেক

এটি একটি ভিয়েনিজ কেক। ১৮৩২ সালে ভিয়েনার প্রিন্স ওয়েনজেল ভন মেটারনিচের জন্য অস্ট্রিয়ান ফ্রাঞ্জ স্যাচার তৈরি করেন। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত চকলেট কেক। এই মাস্টারপিস কেকে ৩ লেয়ারে চকলেট স্পঞ্জ কেক দেওয়া হয়৷ প্রতিটি লেয়ারের মধ্যে এপ্রিকট জ্যাম দেওয়া হয়। আর পুরো কেক ডার্ক চকলেট আইসিং দিয়ে কভার করা হয়। ট্র্যাডিশনালি এই কেক মিষ্টিছাড়া হুইপড ক্রিম দিয়ে সার্ভ করা হয়।

জার্মান চকলেট কেক

নাম দেখে ভেবে বসবেন না এটি জার্মানির কেকে। একজন ইংলিশ আমেরিকান চকলেট মেকার স্যামুয়েল জার্মানের নাম অনুযায়ী তার এই চকলেট কেকের নামকরণ করা জার্মান কেক। এই কেকের রেসিপিতে ডার্ক বেকিং চকলেটের ফর্মুলেশন ব্যবহৃত হয়। এটি একটি লেয়ারড চকলেট চকলেট কেক যা কোকোনাট-পিকান ফ্রস্টিং দিয়ে সাজানো হয়।

জোফ্রি কেক

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপরই “Bucharest’s Casa Capsa” রেস্টুরেন্টে ফ্রেঞ্চ মার্শাল জোসেফ ফোফ্রির আগমনে তার জন্য তৈরি করা হয়েছিলো। এটি একটি চকলেট বাটারমিল্কের লেয়ারড কেক যা চকলেট গানাশ দিয়ে ফিল করা হয় এবং চকলেট বাটারমিল্ক দিয়ে ফ্রোস্ট করা।

মল্টেন চকলেট কেক

চকলেট কেকের জগতে ভীষণ জনপ্রিয় একটি কেক চকলেট মল্টেন কেক যেটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় লাভা কেক নামে। এই কেকের ব্যাটারে কোনো ময়দা দেওয়া হয় না এবং মধ্যে লিকুইড চকলেট ব্যবহার করা হয়৷

ডিং ডং কেক

১৯৬৭ সাল থেকে এই কেকের প্রচলন শুরু হয়। আমেরিকার হস্টেস ব্র্যান্ড এবং কানাডার ভ্যাকোন কিং ডন্সের নামে এই কেকের উৎপাদন শুরু করে। এটি একটি তিন ইঞ্চি ব্যাসের গোল কেক যার উপর নিচ ফ্ল্যাট এবং এক ইঞ্চির মতো লম্বা। এর আকৃতি অনেকটা হকি পাকের মতো। এর ভেতরে সাদা ক্রিম ফিল দেওয়া হয় এবং উপরে চকলেট গ্লেজের কোট করা।

ding dong cake

ডিং ডং কেক

 

জানেন কি?

  • আমেরিকায় প্রতিবছর ২৭ জানুয়ারি জাতীয় চকলেট কেক দিবস পালিত হয়।
  • জরিপ অনুসারে ৫৮% মানুষ ভ্যানিলার চেয়ে চকলেট কেক বেশি পছন্দ করে।
  • ১৫% মানুষ গোটা একটা চকলেট কেক একাই খেতে চান।
  • মুড সুইং কিংবা প্রিমেন্সট্রুয়াল ক্র্যাম্পের চকলেট কেক আপনাকে স্বস্তি দিতে পারে।
  • চকলেট কেক মহাগনি কেক নামেও পরিচিত।
  • বিশ্বের সবচেয়ে দামি চকলেট কেকের উচ্চতা ছিলো ৩৬ সেন্টিমিটার বা ১৪ ইঞ্চি এবং এটি ৫০ ক্যারেট ডায়মন্ড দিয়ে সাজানো হয়েছিলো। ওসাকার একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে প্রদর্শিত এই কেকের মূল্য প্রায় ৯৫ লাখ ডলার।

চকলেট কেক নিয়ে এতো-কথার পরে আমার তো এখন একটু চকলেট কেক খাওয়া চাই ই চাই। আপনারও চাই নাকি? তাহলে দেরী না করে অর্ডার করে ফেলুন আমাদের ওয়েবসাইট থেকেLet’s face it, that creamy soft chocolate cake!

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

`
  • No products in the cart.